বাংলাদেশের মানুষ যখন অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে জোট সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের মুহুর্তটির জন্য। তার ৩ দিন আগেই গঠীয়ে দিলো এই নরকিয় কান্ড! রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সহিংস ঘটনায় প্রান হারান ১৩ জন। আহত হন কয়েক হাজার মানুষ। রাজধানীতেই জামায়াত ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের ছয়জন এবং ছাত্র মৈত্রীর একজন কর্মী প্রাণ হারান। নির্মম প্রহার, গুলি বর্ষণ আর ইট পাটকেলের আঘাতে রাজধানীর পল্টন এলাকায় নিহত হন ছয়জন।জোট সরকার নির্ধারিত সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন ঘোষনা দেওয়ার পর এবং দেশের মানুষ টিভি এবং সংবাদ পত্রের দিকে নজর রাখছেন সরকার কেমন প্রস্তুতি নিচ্ছেন বিদায়ের জন্য। রেওয়াজ অনুযায়ী ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশ্যে বিদায়ী ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার পর পরই পরিকল্পিতভাবে সারাদেশে সৃষ্টি করা হলো এক চরম নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি, ভাংচুর, জালাও পোডাও, লুটপাট ও সড়ক অবরোধ। ঢাকার পল্টন মোড়ে এ কি লোমহর্ষক, হৃদয় বিদারক দৃশ্য, লগি, বৈঠা, কিরিচ, লাঠি ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে একদল উম্মত্ত মানুষ নির্বিচারে অত্যাচার চালিয়েছে আরেক দল মানুষের উপর। এইটা কি মানুষের পক্ষে সম্ভব!! পিটিয়ে, খুচিয়ে খুচিয়ে আঘাতের পর আঘাত জীবন্ত যুবকদের হত্যা , হত্যার পর মৃত লাশের উপর দাঁড়িয়ে উল্লাসনৃত্য! এ হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখে মূর্ছা গেছেন অনেক মা বোন বাবা ভাই, কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মানবিক চেতনা সম্পন্ন প্রতিটি মানুষ। গণতান্ত্রিক সভ্যতার যুগে এ কেমন ভয়ঙ্কয় খেলা! আজ জরুরী অবস্থা , দেশ কে কেউ বলেন ১০ বছর, কেউ বলেন ২০ বছর পিছিয়ে নেওয়া এই সবই একই সুত্রে গাথা।মানুষ এখন বুঝতে পারে কেন মহাসমাবেশে সন্ত্রাসীদের নেত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা করেছিলেন লগি বৈঠা লাঠি নিয়ে দেশকে অকার্যকর করে দেওয়ার। এই সবের একটি মাত্র কারণ "ক্ষমতা"। কিন্তু কি ভাবে ভাবলো এই বর্বরের দল যে অস্থিতি শীলতা এবং বিশৃঙ্খলা করলে তাদের কে ক্ষমতায় বসাবে জনগণ? জরুরী অবস্থা যে দলের আন্দোলনের , যে দলের নেত্রীর ঘোষণার ফসল, তারাই আবার সেই জরুরী অবস্থার সরকারের বিরুদ্ধে বড় বড় কথা বলছেন। বন্ধুকের নালির সামনে তারা আর লগি বৈঠা তান্ডব দেখাতে পারছেনা। তাই তাদের কাছে এখন বন্দুকের নালিও বিষপোড়া হয়ে দাড়িয়েছে। তাদের অহেতুক আন্দোলন বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের জন্য ছিলোনা, তারা চেয়েছিলো ক্ষমতার মাধ্যমে দেশে একটি পুতুল সরকার, যারা দেশে বিশৃঙ্খলা দুর্নীতি সন্ত্রাসী ডাকাতির মাধ্যমে এক হিংস্র জনপদে পরিনত করার। তারা যে ভোটার লিষ্টের জন্য আন্দোলন করেছে, আবার সেই ভোটার লিষ্টের মাধ্যমে নির্বাচনের কথা বলেছে, শেষ পর্যন্ত নির্বাচন করার জন্য মাঠে নেমেও সৈরশাসক এরশাদের জন্য নির্বাচন করেনি, এই রকম হাস্যকর বিষয় গুলো বাংলার জনগণ ভুলবেনা। যারা ক্ষমতার লোভে মাত্র তিন দিনে ২৬ জন মানুষকে খুন করতে পারে, ক্ষমতার মসনদে বসলে তাদের হাতে কত মায়ের বুক খালি হবে?আর কতকাল দেশবাসী রাজনীতির অসহায় শিকারে পরিণত হবে? এই প্রশ্ন আজ দেশের সর্বত্র। যারা শুধু ক্ষমতা দখলের জন্য গণতন্ত্রকে হত্যা করে, জনগণের কথা না ভেবে একের পর এক ধ্বংসাত্মক কর্মসুচি দিয়ে দেশে নৈরাজ্যকর পিরস্থিতি সৃষ্টি করে জোর করে ক্ষমতা দখলের স্বপ্ন দেখে। আর সেই স্বপ্ন পূরণের কথা ভেবে দেশের শান্তিকামী মানুষের রক্ত মেখে উল্লাস করে। লাশের পর লাশ ফেলে ক্ষমতায় যাওয়ার সিড়ি বানায়। তাদের কাছ থেকে কি দেশের মানুষ শান্তি আশা করতে পারে? যে নেত্রীর একটি ঘোষণায় শত লাশ আর সহস্র মানুষের স্বজন হারানোর কান্না ভেসে আসে, যিনি নিজেই মানুষ হত্যার ঘোষণা দেন তার কাছে দেশের মানুষ কি নিরাপদ?এই বার দেশের জনগণকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে, আসুন সবাই হত্যা সন্ত্রাস ও নৈরাজ্যের কে "না" বলি।যে মির্জা আযম, নানক, ইকবালের হাতের ইশারায় এই নরকিয় হত্যা কান্ড গঠেছে, তারা এখনো আইন , সরকার এবং সচেতন বাংলাদেশী নাগরিকদের বিদ্দা আঙ্গুলি দেখিয়ে সমাজে সচর আচর চলাপেরা করছেন। যা বাংলাদেশের সকল নাগরিকের জন্য লজ্জাকর। তাই আমাদের দাবী যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই সব হত্যাকারী ঘাতকদের বিচারের কাঠগড়ায় এনে সঠিক বিচার করা হোক।২৮ অক্টোবরের সকল শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
Tuesday, October 28, 2008
Friday, July 25, 2008
গণতন্ত্রের রূপ.....।
খলীফা হযরত আবু বকর যখন বুঝতে পারলেন তার অন্তিম সময় ঘনিয়ে এসেছে, মৃত্যুর পূর্বেই পরবর্তী খলীফা মনোনীত করে যাওয়াকে তিনি কল্যাণকর মনে করলেন। তার দৃষ্টিতে ' উমার রাঃ ছিলেন খিলাফতের যোগ্যতম ব্যক্তি । তা সত্বেও উচু পর্যায়ের সাহাবীদের সাথে এ ব্যাপারে পরামর্শ করা সমীচীন মনে করলেন। তিনি আবদুর রহমান ইবনে আউফ রাঃ কে ডেকে বলেন, উমার সম্পর্কে আপনার মতামত আমাকে জানান। তিনি বললেন : তিনি তো যে কোন লোক থেকে উত্তম, কিন্তু তার চরিত্রে কিছু কঠোরতা আছে। তারপর আবু বকর অনুরোধ করলেন, তার সাথে আলোচিত বিষয়টি কারো কাছে ফাস না করার জন্য। অতঃপর তিনি উসমান ইবনে আফফানকে ডাকলেন। বললেন, 'আবু আবদিল্লাহ, ' উমার সম্পর্কে আপনার মতামত আমাকে জানান।' উসমান বললেন : আমার থেকে আপনিই তাকে বেশী জানেন। আবু বকর বললেন , তা সত্বেও আপনার মতামত আমাকে জানান। উসমান বললেনঃ তাকে আমি যতটুকু জানি, তাতে তার বাইরের থেকে ভেতরটা বেশী ভালো। তার মত দ্বিতীয় আর কেউ আমাদের মধ্যে নেই। আবু বকর (রা) তাদের দু জনের মধ্যে আলোচিত বিষয়টি গোপন রাখার অনুরোধ করে বিদায় দিলেন। এভাবে বিভিন্ন জনের কাছ থেক মতামত নেওয়া শেষ হলে তিনি উসমান ইবন আফফানকে ডেকে ডিকটেশ দিলেনঃ ' বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম। এটা আবু বকর ইবন আবি কুহাফার পক্ষ থেকে মুসলমানদের প্রতি অঙ্গিকার। আম্মা বাদ' এত টুকু বলার পর তিনি সংজ্ঞা হারিয়ে ফলেন। তারপর উসমান ইবন আফফান নিজেই বাকিটা সংযোজন করেন- ' আমি তোমাদের জন্য ' উমার ইবনুল খাত্তাবকে খলীফা মনোনীত করলাম এবং এ ব্যাপারে তোমাদের কল্যাণ চেষ্টায় কোন ক্রটি করি নাই।' অতঃপর আবু বকর সংজ্ঞা ফিরে পান। লিখিত অংশটুকু তাকে পড়ে শোনানো হলো।' সবটুকু শুনে তিনি "আল্লাহ আকবার" বলে ওঠেন এবং বলেন : আমার ভয় হচ্ছিল, আমি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় মারা গেলে লোকেরা মতবেদ সৃষ্টি করবে। উসমানকে লক্ষ্য করে তিনি আরো বলেনঃ আল্লাহ তা'আলা ইসলাম ও মুসলমানদের পক্ষ থেকে আপনাকে কল্যাণ দান করুন। তারপর আবু বকর সমবেত লোকদের বলেন : ' যে ব্যক্তিকে আমি আপনাদের জন্য মনোনীত করে যাচ্ছি তার প্রতি কি আপনারা সন্তুষ্ট ? আল্লাহর কসম, মানুষের মতামত নিতে আমি চেষ্টার ক্রটি করিনি। আমার কোন নিকট আত্মীয়কে এ পদে বহাল করিনি। আমি ' উমার ইবনুল খাত্তাবকে আপনাদের খলীফা মনোনীত করেছি। আপনারা তার কথা শুনুন, তার আনুগত্য করুন।' এভাবে উমার রাঃ খিলাফত শুরু হয় হিঃ ১৩সনের ২২ জামাদিউস সানী মুতাবিকে ১৩ আগস্ট ৬৩৪ খৃঃ ।ইসলামী হুকুমাতের নিয়মতান্ত্রিক প্রতিষ্টা মূলতঃ উমার রাঃ এর যুগেই হয়। সরকার বা রাষ্টের সকল শাখা তার যুগেই আত্মপ্রকাশ করে। তার শাসন ও ইনসাফের কথা সারা বিশ্বের মানুষের কাছে কিংবদন্তীর মত ছড়িয়ে আছে। হযরত উমার প্রথম খলীফা যিনি "আমিরুল মুমিনীন" উপাধি লাভ করেন।
Monday, July 21, 2008
আমি কে ?
আল্লাহর সৃষ্টি জগতের কোন পদার্থই মানুষের কাছে তার দেহ অপেক্ষা অধিকতর নিকটবর্তী নয়। মানুষ তার নিজ দেহ ও আত্মা নিয়ে গবেষনা করলে জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোর জগতে প্রবেশ করতে পারে। নিজেকে জানার অর্থ হচ্ছে দেহ ও আত্মাকে জানা। মহান স্রষ্টা, হযরত আদম (আঃ) কে তাঁর নিজের পচন্দ মতো করে সৃষ্টি করেছেন। তাই আদম সন্তান নিজেকে চিনে নিতে পারলেই, আল্লাহর পরিচয় লাভ করতে পারবে। আল্লাহ পাকের সৌন্দর্য ও তাঁর তত্ত্বজ্ঞান লাভে ধন্য হবে। নিজেকে জানা মানেই, স্রষ্টাকে-তাঁর সৃষ্টিকে জানা। সুস্থ পীড়ামুক্ত আত্মার অধিকারী হওয়া। আল্লাহ বলেন, যে সুস্থ অন্তর নিয়ে আল্লাহর কাছে আসবে। জান্নাতে আল্লাহ ভীরুদের নিকটবর্তী করা হবে। (সুরা শোআরা ৮৯-৯০)সুরা হামিম আস সাজদায় উল্লেখ রয়েছে,'ওদের কর্ণচক্ষু ও ত্বক ওদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে সাক্ষ্য দেবে ওদেরই বিরুদ্ধে।' তাই 'আমি'র রহস্যভেদ করা বড়ই কঠিন। আমার ত্বক,চোখ,কান,অঙ্গ-প্রত্যঙ্গই আমার নয়, তাহলে আমি কে? নিজ অস্তিত্ব ও ব্যক্তিত্বের গরুত্ব জানতে পারলেই খোদার অপার মহিমা ও অসীম ক্ষমতার সন্ধান লাভ করা যাবে। তখন জানা যাবে প্রতিটি মানব সন্তানই স্বভাবধর্ম ইসলামের যোগ্যতা নিয়ে জন্মগ্রহণ করে, পরে পিতামাতার মত গ্রহণ করে বিভ্রান্ত হয়।মহাবিস্ফোরণের পর, আকাশমন্ডলী,পৃথিবী, গ্রহ-নক্ষত্রমন্ডলী,গ্যালাক্সিগুলো, সব প্রাণের বিভিন্ন রূপ সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে আল্লাহ সব কিছুকে অস্তিত্ব ধারণ করে তাদের সবাইকে স্বীয় ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার নির্দেশ প্রদান করেছিলেন, তখন সবাই তাঁর অনুগত হয়ে এসেছিল।'আমরা এলাম অনুগত হয়ে।' (সুরা হামিম আস সাজদাহ-১১)। মানুষের মধ্যে অনেকে কোন শক্তি বলে আল্লাহকে অস্বীকার করে! নাস্তিক হয়! তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে সঙ্কোচ বোধ করে। বড় বড় বুদ্ধিজীবী,জ্ঞানী,বিজ্ঞানী বলে নিজেকে দাবি করে কিন্তু মহাবিজ্ঞানীর বিজ্ঞান গ্রন্থ আল কুরআন বুঝে না, মহাবিজ্ঞানীর শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আপন দেহ ও আত্মার গভীরে প্রবেশ করে না। মানবদেহে ও আত্মায় রয়েছে স্রষ্টার ক্ষমতার নিদর্শণ। যারা স্রষ্টার অস্তিত্ব খুজেন, তাদের কে বলবো আপনি আপনাকে দেখুন, আপনাকে নিয়ে ভাবুন, স্রষ্টার অস্তিত্ব পেয়ে যাবেন।মানব আত্মা হচ্ছে 'আল্লাহর হকুম'। মহান আল্লাহ মানব আত্মাকে ধারণাতীত ও নিরাকার রূপে সৃষ্টি করে সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ওপর আধিপত্য ও প্রভুত্ব প্রদান করেছেন এবং সতর্ক করে বলেছেন, 'সাবধান, নিজ অস্তিত্ব ও নিজের বাদশাহি সম্পর্কে অসতর্ক থেকো না । যদি ভুলো, তবে তোমার সৃষ্টিকর্তাকে ভুলবে।'সুরা জারিয়াতে আল্লাহ তায়ালা জোরালোভাবে ঘোষনা দিয়েছেন,'আমি জ্বিন ও মানবজাতিকে শুধু আমার দাসত্ব করার উদ্দেশ্যই সৃষ্টি করেছি। তা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্যে নয়।' আর মানুষের সুবিধার্থে ও কল্যাণে আসমান,জমিন এবং এর মধ্যস্থিত সব কিছুই মানুষের অধীন করে দিয়েছেন। ' আসমান ও জমিনের মধ্যস্থিত সব কিছুই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের (মানুষের) অধীন করেছেন।'( সুরা জাছিয়া)দয়াময় আল্লাহর অফুরন্ত নিয়ামতের জন্য মানুষকে তাঁর কাছে চিরকৃতজ্ঞ হতে হবে। তার নিমক হারামি করা যাবে না । দুনিয়াতে মানুষের চাওয়া - পাওয়ার শেষ নেই। সুখ-শান্তির ঠিকানা বিজ্ঞানীরাও খুঁজে পাননি। সুখ-শান্তির রহস্য আবিষ্কারের একমাত্র পথ নিজেকে জানা। নিজেকে জানার মাধ্যমেই সব রহস্যের দুয়ার খুলে যাবে। আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের স্মরণে মনের জমিনে সুখের ঠিকানা গড়া সম্ভব হবে। "যে নিজেকে চিনেছে সে তার প্রভুকে চিনতে পেরেছে।" যে পৃথিবীর সবকিছুই পেল কিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে পেল না, সে কি সুখী? সে তো কিছুই পেল না! হে আল্লাহ, আমাদের কুরআন ও হাদিসের মর্মবাণী উপলব্ধি করে সরল সঠিক পথে চলার জ্ঞান দাও। যাতে করে নিজেকে জানার মাধ্যমে স্রষ্টাকে ও তাঁর সৃষ্টিকে জানতে পারি। নবী (সাঃ) এর আদর্শের অনুসারী হতে পারি।
Subscribe to:
Posts (Atom)